বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
এস এল টি তুহিন : আশ্রয়নের অধিকার-শেখ হাসিনার উপহার” এই প্রতিপাদ্যকে সাবনে রেখে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় বরিশাল জেলার সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে তৃতীয় ধাপে নির্মাণাধীন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে ঘর পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুজ্জামান। তিনি প্রতিদিন সরজমিনে গিয়ে চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামের আশ্রয় প্রকল্পের ভূমিহীনদের গৃহনির্মান কাজ পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুজ্জামান ও ভূমি কর্মকর্তা ( এসিল্যান্ড) তারিকুল ইসলাম ছুটির দিনেও বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করেও আশ্রয়ন প্রকল্পে সরেজমিনে উপস্থিত থেকে ভূমিহীনদের গৃহনির্মান কাজ ও সুবিধাভোগী মানুষের সার্বিক দিক খোঁজ খবর নেন। সদর উপজেলা চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামে গত বছরে ১৮৪টি ঘর নির্মান করে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে গিলাতলী ও চরকাউয়া গ্রামে আরাে ৪০টি গৃহনির্মান কাজ ও আরো ৫০টি গৃহনির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। সেই সাথে ঘর নির্মানে গুনগতমান ভালো রেখে কাজ চলমান রেখেছেন ইউএনও।
আশ্রয়ন প্রকল্পের উপকারভোগীও সদর উপজেলা চরমোনাই ইউনিয়ন গিলাতলী গ্রামের আশ্রয় প্রকল্পের সভাপতি মো: আলম মৃধা বলেন, আমাদের উপহারের ঘর মজবুত ও ভালোমানে ঘর নির্মান করছেন ইউওনও স্যার। তিনি প্রতিদিন এসে কাজ পরিদর্শন করেন । তাছাড়া স্যার না থাকলে ইঞ্জিঃ জহিরুল স্যার বা সাথে তরুন নামের একটি ছেলে উপস্থিত থাকেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরকম বর্তমানে ঘর নির্মাণ কাজ দেখে এখানে সকল মানুষ খুশি। আমাদের আশ্রয় প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা কৃতজ্ঞতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
দ্বিতীয় ধাপের প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ন কেন্দ্রের উপকারভোগী বাসিন্দা মনির বলেন, অনেক বছর আগে নদীতে বাড়ি ঘর ভেঙে যাবার পর ২ ছেলে ১ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাসমান ভাবে থাকতাম পাশ্ববর্তী একটি চরে। যেখানে বসবাসে দূর্ভোগের শেষ ছিলো না। সরকার ও বরিশালের ডিসি স্যার খুঁজে এনে কোন টাকা ছাড়াই এখানে ঘর ও জমি দিয়েছে। এই ঘর আমাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছে। বর্ষা হলে কষ্টের শেষ ছিলো না আমার । স্বপ্নেও ভাবিনি নিজেদের জায়গায় নিজেদের বাড়ি হবে। ইউএনও স্যার এত সুন্দর ঘর তৈরি করেছে। যা প্রশংসা পাওয়ার বিষয়। আমরা সরকারকে এবং বরিশালের জেলা প্রশাসক ও ইউএনও স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।
কিছু দিন আগে বরিশালে ভিক্ষা করতেন রাজিয়া। স্বামী কবির তালুকদার ভ্রাম্যমান ভাবে শ্রমিকের কাজ করতেন। ৩ সন্তানকে নিয়ে রসুলপুর বস্তিতে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। এখন তার স্থায়ী ঠিকানা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ন।
রাজিয়া বলেন, মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হতো। খাই বা নাই খাই মাস শেষ হবার আগে ঘর ভাড়ার টাকা যেভাবেই হোক গুছিয়ে রাখতে হতো। টানাটানির সংসারে খুব কষ্ট হতো ভাড়া দিতাম। কিছু করার ছিলো না।
বাচ্চাদের নিয়ে থাকার জন্য একটা ঘর তো দরকার। আল্লাহর রহমতে সরকার ঘরের ব্যবস্থা করেছে। এখন আর আমাদের থাকতে কোন ভাড়া দিতে হয় না। নিজের ঘর হয়েছে। তাই ভাড়ার টাকাটা বেঁচে যাওয়ায় তা সংসারের কাজে খরচ করতে পারি।
আশ্রয়নের আরেক বাসিন্দা মাহমুদা বলেন, নদীতে বাড়ি ঘর ভেঙে যাবার পর ৪ ছেলে ২ মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে ভাসমান ভাবে থাকতেন পাশ্ববর্তী নতুন চরে। যেখানে বসবাসে দূর্ভোগের শেষ ছিলো না। মাহমুদা বলেন, সরকার ও বরিশালের ডিসি স্যার খুজে এনে এখানে ঘর ও জমি দিয়েছে। এই ঘর আমাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর থেকেছি। এখনো হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে উপরের দিকে চেয়ে দেখি খোলা আকাশ নয়, মাথার উপরে আশ্রয়নের টিনের ছাদ আছে।
মাহমুদা বলেন, স্বপ্নেও ভাবিনি নিজেদের জায়গায় নিজেদের বাড়ি হবে। আমরা এখন বলতে পারি আমাদের নিজস্ব ঘর আছে। আমরা সরকারকে এবং বরিশালের জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই। এখন আমাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটা স্কুলের ব্যবস্থা করলেই হয়। সরকারের কাছে আর আমাদের কোন চাওয়া পাওয়া নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘরের গুণগত মান নিশ্চিত করতে ভালো মানের রড, সিমেন্ট, কাঠ, বালু, টিন ইত্যাদি’র ব্যবহার করা হয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘুরতে আসা দর্শনাথীদের মুখে মুখে ঘর নির্মানের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে শুধু ঘর নিমার্নেই না ইউএনও মনিরুজ্জামান প্রশংসা কুড়িয়েছেন নানা কার্যক্রমে। তিনি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঘুরে বেয়ান উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকা গুলোতে। খোঁজ খবর নেন অসহায় মানুষদের। সুবিধা বঞ্চিতদের অভিযোগ শুনেন ধৈর্য্যরে সাথে। ব্যবস্থাও নেন তড়িৎ গতিতে। খুব অল্প সময়ে সাধারন মানুষের মনে ভালোবাসার জায়গা করে নিয়েছেন ইউএনও। তাছাড়া মানুষের অধিকার ও আইনি সেবা দিতে সব সময় চৌকশ ভূমিকা পালন করছেন। সদর উপজেলায় ইতিহাসে যা খুব অল্প সময়ে এক অনন্য নজির গণমাধ্যম, ফেসবুক এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবা, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করে তোলা, অসহায়দের শীর্ততদের মাঝে কম্বল বিতরণ মহতি উদ্যোগ নেয়া এবং মানবিক বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য সর্বমহলে হয়েছেন ব্যাপক প্রশংসিত।
সদর উপজেলা সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন প্রকল্প বরিশাল সদর উপজেলায় প্রথম দফায় ১৫৭ টি দ্বিতীয় দফায় ১০০ টি এবং তৃতীয় দফায় ৪০ টি গৃহ নির্মাণ করা হবে এর মধ্যে ২০৭টি গৃহ নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ৫০ টি এবং তৃতীয় দফার ৪০ টি গৃহ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ঘরগুলো ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয়। তৃতীয় দফার ঘরগুলোর টেকসই ও গুণগত মান বিবেচনা করে ঘর প্রতি ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা করে নির্মাণ করা হয়েছে।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনিরুজ্জামান বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে এবং ৯০টি ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। আমাদের গৃহনির্মাণ কাজ শেষ হলেই গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এসব ঘরে আশ্রয়া পাওয়াদের অধিকাংশই রাস্তার ধারে ফুটপাত বা কারও আশ্রয়ে বসবাস করতেন। এখন তারা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেলেন। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের জমি ও ঘর নাই, তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় অসহায় ভূমিহীন পরিবারকে বিনামূল্যে ঘর ও ২শতাংশ জমি উপহার দেয়া হবে। আমরা সঠিক লোক যাচাই বাচাই করে ঘর দিবো। আমরা সরকারে প্রতিনিধি। জনগনের সেবক। সব সময় অসহায়,সাধারন মানুষের পাশে আমরা আছি থাকবো।
এ বিষয় বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘরে আশ্রয়া পাওয়াদের অধিকাংশই রাস্তার ধারে ফুটপাত বা কারও আশ্রয়ে বসবাস করতেন। ওই মানুষগুলোর কিছু দিন আগেও কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিলো না। এখন তাদের নিজেদের জমি ও ঘর হচ্ছে। তারা এখন কয়েকটি ধাপে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পাচ্ছেন। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের জমি ও ঘর নাই, তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে । বর্তমান সরকারের নির্দেশনা রয়েছে দেশে কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকতে পারবে না। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করতেছি।
তিনি বলেন, নতুন করে আরো অনেক আবেদন জমা পড়েছে। আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করছি। বর্তমানে তৃতীয় ধাপে দেড় হাজারের বেশি ঘরের নির্মান কাজ চলমান ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, মুজিববর্ষের অঙ্গিকার অনুযায়ী “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন এলাকায় ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন তৃতীয় ধাপের ঘর নির্মাণ এর কাজ চলমান খুব কম সময়ের মধ্যেই টেকসই উন্নয়ন মানের ঘর নির্মাণ করা হবে।